অন্যমনে সাহিত্য. অন্য রকম দৃষ্টিকোন থেকে দেখা একটি প্রতিবিম্ব ভাবনা .. অন্যমনে সাহিত্য.

রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

লকডাউনে তমালী  

  

 



লকডাউনের টুকরো কোলাজ
====================
তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

====================



খাদের ধারে দাঁড়িয়ে জীবন...

মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শোনে।

দেওয়াল ঘড়ির টিকটক আওয়াজটা বন্ধ হয়। বোধহয় ব্যাটারি ফুরিয়েছে।

লকডাউনের বন্ধ সময়ে বদ্ধ জীবনে অস্থির মন।

দূরে ঘ্যানঘ্যান করে খিদেপেটে একটানা কেঁদে চলেছে শিশুটি।

নিভন্ত উনুন আর খালি হাঁড়িটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ওর মা।

লকডাউনে কাজ হারিয়ে দেবু ঘরে বন্দী। ও আজ বুঝেছে ওর বৌয়ের ঘরবন্দী জীবন বড় কষ্টের।

মানুষ আকাশের তারা হয়ে যায়।

বাড়ির ছাদে সুমন অন্ধকার আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে খুঁজছে সেই তারাটা ।

দূর দেশে আটকে পড়ে বাবা-মায়ের জন্য বড় মনখারাপ করছে দীপের...কিছুতেই ঘুম আসছেনা।

অল্প কিছু আত্মীয় নিয়ে বিনা অনুষ্ঠানেই বিয়েটা করে নিতে হলো অর্পণকে। শুধু সিঁদুর দান আর সইসাবুদেই দুটি মনের মিলন হলো।

ক'বে আবার স্কুলে যাবো??ছোট্ট রিয়ার এমন প্রশ্নে মা নিরুত্তর।

ভোরবেলা উঠে অনিন্দ্য খাঁচা খুলে পাখীগুলোকে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিলো। ও বুঝেছে আটকে থাকা আর আটকে রাখা সমান যন্ত্রণার।

পরিযায়ী শ্রমিকের ঘাম, রক্ত মিশে গেলো চলার পথে।

থেঁতলে যাওয়া শ্রমিকের রক্তে ভেজা রুটিতে মুখ দিলোনা কাকের দল... কর্কশ ডেকে উড়ে গেলো দূরে।

দুর্গোৎসবের সমারোহ বাতিল হলো...টিভির পর্দায় মা দুর্গার মুখ দেখে ঘরেই অঞ্জলি দিলো প্রভা। মনে মনে বললো --রোগ,যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করো মা... তোমার সন্তানদের ভালো রেখো।

এত অসুস্থ মানুষ সামলাতে হসপিটালে দিনের পর দিন... রাতের পর রাত জাগলো কত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা...তাদের কুর্নিশ জানালো সাধারণ মানুষ।

একটা ক্ষুদ্র মারণ ভাইরাস দেখিয়ে দিলো... হসপিটালের কাঠামো, অক্সিজেনের চাহিদা,ভেন্টিলেটরের অপ্রতুলতা ...আরো ডাক্তার, নার্স...উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার প্র‍য়োজনীয়তা ।

এরমধ্যেই কিছু মানুষ শুধু মানুষকে ভালোবেসে মানুষের পাশে থাকলো...খাবার,ওষুধ পৌঁছে দিলো দুর্গত মানুষের কাছে...অক্সিজেন যোগাড় করে দিলো ...অসুস্থ রোগীকে হসপিটালে ভর্তির ব্যাবস্থা করলো।

আবার কিছু মানুষ ছোঁয়াচে রোগের ভয়ে এড়িয়ে চললো নিকটজনকে।

এভাবেই একদিন লকডাউন উঠে আংশিক লকডাউন শুরু হলো। কিছু আপিস খুললো...অল্প কিছু বাস চললো... ট্রেণ বন্ধ থাকায় মানুষ ভিড় করে বাসেই উঠলো।

ভিড় বাসে গাদাগাদি মানুষের ভিড়ে কে যেন বললো ---ভিড়বাসে করোনা ভাইরাস থাকেনা। মাস্ক জড়ানো মুখগুলো নিরুপায় হেসে উঠলো।

দুর্গোৎসব বন্ধ থাকলেও ভোটোৎসব বন্ধ হলোনা। মিছিল হলো... মিটিং হলো...মানুষ ভিড় জমালো। করোনা বাড়লো...মৃত্যু মিছিল দেখলো লোকে। কিন্তু মৃত্যুর দায় কেউ নিলোনা।

করোনার ভ্যাক্সিন এলো বাজারে। লাইন লাগালো সাধারণ মানুষ... সারারাত লাইন দিয়েও কেউ পেলো...কেউ অপেক্ষার প্রহর গুণে না পেয়ে ভগ্নহৃদয়ে ফিরে গেলো ঘরে। তারমধ্যেই মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে জাল ভ্যাক্সিনের কারবার খুললো অসৎ মানুষ।

এমনি করেই প্রায় দু'টো বছর কেটে গেলো

কিন্তু মানুষ এখনো মুখোশ পরে... এখনো সবাই ভ্যাক্সিন পায়নি। মৃত্যু মিছিল এখনো অব্যাহত। এখনও মানুষ নিরাপদ নয়।

একটাই প্রার্থনা... মানুষ ভালো থাকুক। মৃত্যু ভুলে জীবনের গান গেয়ে উঠুক সবাই।

যাদের হারিয়েছি জানি ফিরবেনা কেউই।

মনখারাপের বিষাদ বৃষ্টিতে মন ভিজে যায়।

অন্ধকারের উৎসের দিকে তাকিয়ে থাকে মন আর শুধু ভাবে... এবার আলো...শুধু আলো উৎসারিত হোক...আর অন্ধকার চাইনা... চাইনা অসুখ... আর মৃত্যু চাইনা।।

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন